বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০১৪

বিস্মৃতির অতলে চাপা পড়া এক কল্পনাতীত নিকৃষ্টতা এবং নাম না জানা কিছু মা-বোনের ইতিহাস ( ১ম পর্ব)

'‘বীরাঙ্গনা’' শব্দটি বাংলা ভাষায় বীর নারী বা বীর্যবতী নারীর বিশেষণেই সীমাবদ্ধ ছিল। ১৯৭১ সালের স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ আত্মপ্রকাশের পর ‘বীরাঙ্গনা’ শব্দটি ভিন্ন তাৎপর্য ধারণ করে। স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রথম আঘাত আসে নিষ্পাপ অসহায় নারীদের ওপর। স্বৈরশাসক ইয়াহিয়ার প্রথম আক্রোশের আগুনে দগ্ধ হয় বাঙালি নারীরা। ইয়াহিয়া খান ১৯৭১ সালে সরাসরি বাঙালিদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য পাকিস্তান আর্মিকে নির্দেশ দিয়েছিলেন।যশোরে ছোট্ট একদল সাংবাদিকের সাথে কথা বলার সময় তিনি এয়ারপোর্টের কাছে জড়ো হওয়া একদল বাঙালির দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে বলেন যে-  
                       " আগে এদেরকে মুসলমান বানাও..." 
এই উক্তির তাৎপর্য সীমাহীন। এর অর্থ হচ্ছে যে, উচ্চ পর্যায়ের সামরিক অফিসারদের মধ্যে এই ধারণা বদ্ধমূল ছিল যে বাঙালিরা খাঁটি মুসলমান নয়। এই ধারণার সাথে আরো দুটো স্টেরিওটাইপ ধারণাও যুক্ত ছিল।বাঙালিরা দেশপ্রেমিক পাকিস্তানি নয় এবং তারা হিন্দু ভারতের সাথে অনেক বেশি ঘনিষ্ঠ।ইয়াহিয়া খানের এই উক্তিতে উৎসাহিত হয়ে

শুক্রবার, ২১ মার্চ, ২০১৪

৪৩ বছরের বকেয়া যন্ত্রণা কিংবা জন্মপরিচয়হীন কিছু বাস্টার্ডের গল্প.........

" জয়া, জয়া... "
মেয়েকে ডাকছে জাফর সাহেব। কিন্তু মেয়ের কোন সাড়া-শব্দই নেই ! নিজের ঘরেও নেই; কথায় গেলো মেয়েটা ! ভাবতে ভাবতে জাফর সাহেব তার বাড়ির উত্তর দিকে হাঁটতে লাগলো। হঠাৎ দেখল যে জয়া উত্তরের ঘরটি খোলার চেষ্টা করছে। খুব দ্রুত সেদিকে এগিয়ে গেলেন তিনি। জয়া কিছু বুঝে উঠার আগেই ঠাস্‌ করে তার গালে একটা চড় বসিয়ে দিলো জাফর সাহেব।
" এর আগে কতো বার বলেছি যে, এখানে আসবে নাহ্‌।
আর তুমি কিনা এই ঘরটি খোলার চেষ্টা করছ..! অবাধ্য মেয়ে কোথাকার "
কাঁদতে কাঁদতে চলে গেলো জয়া। জাফর সাহেব সেই ঘরটির দিকে একবার তাকালেন। নাহ্‌ আর সহ্য করতে পারছেন না তিনি। বুকের ভেতরটা জ্বলে যাচ্ছে। খুব রাগ হচ্ছে তার; কেমন যেন একটা ঘৃণাও হচ্ছে।
" কি আছে তোমার ঐ বদ্ধ ঘরে ??? "
উত্তরের অপেক্ষা না করে আবারও জয়ার মায়ের প্রশ্ন-
" আজ ২৪ বছর ধরে দেখছি ঐ ঘরটা এইভাবে বন্ধ করে রেখেছ তুমি।
কখনো জানতে চাইলেও বলনি বরং ছটফট করে উঠে চলে গিয়েছো;
তাই কৌতূহল হলেও কিছু জিজ্ঞাসা করিনি কখনো।
কিন্তু আজ ঐ ঘরটা খুলতে গিয়েছে বলে তুমি জয়াকে মারলে !
আজ তোমায় বলতেই হবে কি আছে ঐ ঘরটাতে ?! "

একটি মেয়ে, কয়েকটি স্বপ্ন আর একটি ভালোবাসার মৃত্যু.....

প্রতিদিনের মতই ঘুম থেকে উঠেই এক ঝাঁক অগোছালো চিন্তা নিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ালো কথা। আজ তাঁর অনেক কাজ; প্রথমে ভার্সিটিতে যেতে হবে, ক্লাস শেষে আবার নীলক্ষেত যেতে হবে কয়েকটা প্রয়োজনীয় বই কিনতে, কাল ছোট ভাইটার জন্মদিন ওর জন্য একটা ভালো গিফট্‌ কেনা চাই আবার মায়ের ঔষধও নাকি শেষ হয়ে গেছে। হাতে সময় খুবই কম। এমনিভাবে নানান চিন্তা মাথায় নিয়েই ফ্রেশ হয়ে ভার্সিটিতে যাবার জন্য তৈরি হতে লাগলো সে। মা নাস্তা করার জন্য ডাকছে; ধ্যাত এতো ব্যস্ততার মাঝে নাস্তা করতে মোটেও ভালো লাগে না কথার, কিন্তু কি আর করা মায়ের বকুনি খাবার চেয়ে নাস্তাটা খেয়ে নেয়াই ভালো!! যাহোক, খুব দ্রুত নাস্তা করে ভার্সিটির পথে রওনা হল। রাস্তায় আজ একটা রিক্সাও নেই; যেদিনই কাজের তাড়া ঠিক সেদিনই রিক্সা পাওয়া যায় নাহ্‌। রিক্সার জন্য দাড়িয়ে না থেকে হাঁটতে শুরু করলো কথা।

একুশ.....

" আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী,
আমি কি ভুলিতে পারি... "
আসলেই এই দিনটি ভুলবার নয়, এই পৃথিবীতে বাঙালি জাতির অস্তিত্ব যতদিন টিকে থাকবে, ঠিক ততদিনই আমরা মনে রাখবো এই দিনটিকে...যদিও ৫২'র অনেক আগে থেকেই বাঙালির মনের ভেতর ভাষা আন্দোলনের একটা ঝড় বইতে শুরু করেছিল কিন্তু সেই ঝড় প্রকৃতপক্ষে আঘাত হানে ৫২'র ২১ শে ফেব্রুয়ারীতে। ১৯৪৭-১৯৫২ সাল পর্যন্ত " আমাদের রাষ্ট্রভাষা কি হবে বাংলা না উর্দু " এই বিষয়টি নিয়ে তীব্র ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া চলতে থাকে। এই সময়ের মাঝে পাকি শাসকরা বেশ কয়েকবার উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা দিলেও বাঙালিরা কিছুতেই তা মেনে নেয় না, বরং এই ইস্যুটি নিয়ে তাঁদের ভেতর আন্দোলনের এক সুপ্ত আগ্নেয়গিরি জন্ম নিতে থাকে।

নিবেদিতা নাগ- এক মহীয়সী নারী, ভাষা সৈনিক, রাজনৈতিক এবং শিক্ষাবিদ......


নিবেদিতা নাগ ছিলেন একজন ভাষা সৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের সহযোদ্ধা, শিক্ষাবিদ ও রাজনীতিক। আজ এই মহীয়সী নারীকে নিয়েই আমার এই লেখাঃ-
জন্ম এবং পরিচয়ঃ-
১৯১৮ সালের ৪ আগস্ট নারায়ণগঞ্জে নিবেদিতা নাগের জন্মগ্রহন করেন। নিবেদিতা নাগের বাবা অধ্যাপক সঞ্জীব কুমার চৌধুরী ছিলেন বিপ্লবী সূর্য সেনের সহপাঠী; তিনিক্ষকতা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং নেপালের ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয়ে।মা অমিয়াবালা চৌধুরী ছিলেন স্কুল শিক্ষিকা।
শিক্ষা এবং কর্মজীবনঃ-

প্রাণের জাগরণ...


৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩ 
সময়টা খুব ধীর গতিতে যাচ্ছে...কিছুতেই শেষ হতে চাচ্ছে না। প্রতীক্ষার প্রহর যেন শেষই হতে চাচ্ছে না। মনের ভিতরে এক তীব্র অস্থিরতা কাজ করছে। আর বার বার মনে হচ্ছে...আর কতো দেরী সেই প্রতীক্ষিত রায়টির, কখন শুনবো যে- কসাই কাদের কে ফাঁসির রায় দেয়া হয়েছে। কখন টিভির পর্দায় বড় করে হেডলাইন দেবে যে- কুখ্যাত রাজাকার কাদেরকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। আর কতক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে সেই অন্তিম মুহূর্তটির জন্য।নাহ, আর কিচ্ছু ভালো লাগছে না পড়াশোনা, কাজকর্ম কোনকিছুতেই যেন মনোনিবেশ করতে পারছিলাম না সেইদিন। এমন অস্থিরতাতেই কেটেছিল আমার সেই দিনটি...
৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩ 

স্বাধীনতা আন্দোলনের সূত্রপাত এবং ফেব্রুয়ারী......


মায়ের ভাষায় প্রাণখুলে কথা বলার অধিকার আদায়ের মাস ফেব্রুয়ারী।রক্তের বিনিময়ে মাতৃভাষা রক্ষার মাস এই ফেব্রুয়ারী। বাঙালির প্রানের ভাষা বাংলাকে তার যথাযথ মর্যাদা ফিরিয়ে দেবার মাস এই ফেব্রুয়ারী। ১৯৪৭ সালে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে " পাকিস্থান ও ভারত " নামের দুটি রাষ্ট্রের জন্ম হয়। এরপর " পাকিস্থান" নামক দেশটি "পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্থান" নামে দুই ভাগে বিভক্ত হয়। কিন্তু পুরো পকিস্থানের শাসনভার পশ্চিম পাকিস্থান অন্যায় ভাবে নিজেরদের হাতে কুক্ষিগত করে রাখে। এমনকি এই পশ্চিম পাকিস্থান পূর্ব পাকিস্থানের মানুষের মাতৃভাষার অধিকার পর্যন্ত কেড়ে নিতে চায়।